একনজরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা 2024

দক্ষতার সাথে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার বিষয়ে বাস্তব ধারণা দেয়ার উদ্দেশ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা ২০২৪ তৈরি করা হয়েছে, যা প্রশিক্ষণ পরবর্তী সময়ে মাঠ পর্যায়ে কাজের সময় সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এজন্য একজন নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

এই পোস্ট আপনার জন্যঃ কোন দলের কোন মার্কা বরাদ্দ রয়েছে | ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন 2024

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ায় একজন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যবেক্ষকগণ অবশ্যই সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ধারায় দৃঢ় বিশ্বাসী হবেন যার মাধ্যমে জনগণ একটি বৈধ ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করতে পারবেন। দেখে নিন একনজরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা 2024.

একনজরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা 2024
একনজরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা 2024

 

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা ২০২৪

নিম্নে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।

প্রিজাইডিং অফিসার সংক্রান্ত: প্রিজাইডিং অফিসারের প্রধান কাজ কি | প্রিজাইডিং অফিসার হওয়ার যোগ্যতা 2024

প্রিজাইডিং অফিসারের প্রধান কাজ কি | প্রিজাইডিং অফিসার হওয়ার যোগ্যতা 2024
প্রিজাইডিং অফিসারের প্রধান কাজ কি | প্রিজাইডিং অফিসার হওয়ার যোগ্যতা 2024

অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন কী:

ভীতি প্রদর্শন, ক্ষোভ প্রদান, সন্ত্রাস, বল প্রয়োগ বা অন্য কোনো কাজ যা জনমত প্রতিফলনে বাধা প্রদান করে এবং অবস্থামুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গোপন ভোটের নিশ্চয়তা থাকে, সঠিক গণনা করা যায় এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফলাফল ঘোষনা করা যায়।

আরো পড়ুন: রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব, কর্তব্য ও নিয়োগ

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ২১ নং অনুচ্ছেদের ৩ নং দফায় নির্বাচনের সার্বজনীন মানদণ্ড নির্বাচন করা হয়েছে।

আরো পড়ুন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্য, চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায় 2024

“জনগণের ইচ্ছাই সরকারের ভিত্তি হবে।” এই ইচ্ছা সার্বজনীন মান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে প্রকৃত নির্বাচন দ্বারা ব্যক্ত হবে এবং গোপন ব্যালট ও অবাধ ভোটদান পদ্ধতিতে এরূপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সম্পূর্ণ নির্দলীয় নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোথায় কী ঘটে কিভাবে ঘটছে, সর্বোপরি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া আইন বিধিমতে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা পুঙখানুপুঙখভাবে দেখাই নির্বাচন পর্যবেক্ষন।

আরো পড়ুনঃ নির্বাচনে ভোটারদের করণীয় 2024 | দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক কে?

একজন পর্যবেক্ষককে অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ হতে হবে। নিরপেক্ষ বলতে বোঝায় তিনি কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো কাজ করবেন না। একজন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক প্রকাশ্যে কথা বলে ইঙ্গিতে, দলের প্রতীক লাগিয়ে যা দলের আচরণের দ্বারা কোনো দলের বা প্রার্থীর পক্ষপাতিত্ব করবেন না। পর্যবেক্ষক নির্বাচন প্রক্রিয়া সংরক্ষণের জন্য কাজ করবেন। তবে তিনি তার ব্যক্তিগত ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

পড়তে পারেন: (নতুন নিয়মে) মোটরযান ফিটনেস সনদ প্রাপ্তির আবেদন 2024

পর্যবেক্ষককে যাতে সহজে চিহ্নিত করা যায় সেজন্য প্রত্যেক পর্যবেক্ষক নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত পরিচয়পত্র এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের পরিচয়পত্র বহন ও প্রদর্শন করবেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের আচরণবিধি:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা 2024 এ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নিম্নলিখিত আচরণবিধি উল্লেখ রয়েছে।

  • *পর্যবেক্ষকগণ নির্বচন কমিশন থেকে দেয়া পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখবেন এবং কর্তৃপক্ষকে পরিচয়পত্র দেখাবেন।
  • *পর্যবেক্ষকগণ তাদের দায়িত্ব পালনকালে কঠোর নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন। কোনো সময়েই কর্তৃপক্ষ, দলপ্রার্থী বা নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো বিষয়ে সরাসরি অংশগ্রহণ বা নিজস্ব অভিমত প্রকাশ করবেন না।
  • *পর্যবেক্ষকগণ কোনো দলীয় প্রতীক, রং অথবা ব্যানার ধারণ অথবা প্রদর্শন করতে পারবেন না।
  • *পর্যবেক্ষকগণ কোনো ভাবেই নির্বাচন প্রক্রিয়া, ভোত গ্রহণের দিনে কর্তৃপক্ষের কাজে অথবা ভোট গণনার কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবেন না।
  • *পর্যবেক্ষকগণ সংঘটিত কোনো অনিয়মের প্রতি নির্বাচন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন, কিন্তু তারা কখনই কোনো নির্দেশ প্রদান অথবা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কোনো সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারবেন না।
  • *পর্যবেক্ষকগণ কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য, লিখিত প্রমাণাদি/দলিল এবং সাক্ষ্য, প্রমাণ উপস্থাপন করবেন।
  • *পর্যবেক্ষকগণ অবশ্যই সংশ্লিষ্ট আইন এবং বিধানসমূহ মেনে চলবেন।

পর্যবেক্ষকদের অধিকার এবং দায়িত্ব:

একনজরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা 2024 এর আলোকে পর্যবেক্ষকদের অধিকার এবং দায়িত্ব আলোচনা করা হলো।

  • *নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন কিন্তু একজন ভোটার কাকে ভোট দিচ্ছেন তা দেখা যাবেনা।
  • *পেলিং বুথ খোলার আগে ভোটদানের দ্রব্যাদি পরীক্ষা করতে পারবে এবং ব্যালট বাক্স খালী অবস্থায় সিলমোহর করার সময় উপস্থিত থাকতে পারবেন।
  • *পোলিং বুথে ভোট গ্রহণের শুরু থেকে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করে পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
  • *প্রিজাইডিং অফিসারের নিকট মন্তব্য ও অভিমত জানাতে পারবেন।
  • *ব্যালট গণনার জন্য গণনা কক্ষে অভ্যন্তরে অবস্থান করতে পারবেন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত অনিয়ম হতে পারে

প্রতিটি নির্বাচনেই কিছু না কিছু অনিয়ম হয়েই থাকে। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা 2024 অনুযায়ী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত অনিয়ম হতে পারে তা দেখে নিন।

ভোটের আগে কি কি অনিয়ম হয়?

  • *ভোটে করেচুপি করার উদ্দেশ্যে নির্বাচনের আগেই পছন্দমত/ সুবিধামত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বদলী করে কোনো বিশেষ নির্বাচনী এলাকায় নেওয়া, যারা পরবর্তী সময়ে রিটার্নিং অফিসার অথবা সহকারী টার্নিং অফিসার হিসেবে কাজ করবেন;
  • *কোনো প্রার্থীকে অপহরণ করে, অর্থ বা অন্য কোনো সুবিধার লোভ দেখিয়ে অথবা ভয়তীতি প্রদর্শন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দান করা;
  • *এমন দূরবর্তী বা অসুবিধাজনক স্থানে কেন্দ্র স্থাপন যেখানে ভোটারদের যাতায়াত অসুবিধাজনক, কিন্তু নির্বিঘ্নে ভুয়া/ জাল ব্যালট দিয়ে বাক্স ভরা সুবিধানক;
  • *ভোটারকে টাকা পয়সা, ঋণ, চাকুরীতে উন্নতির লোভ দেখিয়ে বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রভাবিত করা;
  • *টাকা পয়সা দিয়ে বা চাকুরীর লোভ দেখিয়ে নির্বাচনের সাথে জড়িত
  • *কর্মচারী এবং আইন-শৃঙখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করা এবং ভোটের দিন তাদের সাহায্যে কারচুপি করে বিজয় নিশ্চিত করা;
  • *কোনো দল বা প্রার্থীর সমর্থক ভোটারদের ভোট না দেয়ার জন্য বিপক্ষ দল বা প্রার্থী কর্তৃক ভয় দেখানো বা ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া;
  • *ভোটের আগের দিন না রাতে বা ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ত্রাস সৃষ্টি করা, যাতে ভোটাররা ভোট দিতে না আসে
  • *কোনো প্রার্থী প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন বা অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন এরুপ মিথ্যা প্রচারণার দ্বারা ভোটারদের প্রভাবিত করা;
  • নির্বাচনের আগের দিন নির্বাচন কেন্দ্র পরিবর্তন করে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা;

ভোট চলাকালীন কি কি অনিয়ম হয়?

  • নগদ টাকার বিনিময়ে ভেটি কেনা।
  • অন্য ভোটারদের পরিচয়ে এসে ভোট দেওয়া।
  • অমোচনীয় কালী মুছে ফেলে বা কালি না লাগিয়ে একাধিকবার ভোট প্রদান করা।
  • একজন ভোটারকে একাধিক ব্যালট পেপার সরবরাহ করা।
  • ভোটকেন্দ্রে যাতায়াতের অসুবিধা সৃষ্টি করা।
  • পঙ্গু, অন্ধ, প্রতিবন্ধী ভোটারদের সাহায্য করার অজুহাতে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য চাপ দেওয়া।
  • ব্যালট বাক্সে ব্যালটের বদলে সাদা কাগজ জমা নিয়ে এবং নির্বাচন কেন্দ্রের আশে পাশে ব্যালট পেপার দেখিয়ে ভোটারদের মনে সন্দেহের উদ্রেক করা।
  • ভোটকেন্দ্র থেকে অপর পক্ষের এজেন্টদের জোর করে বের করে দেয়া বা ভাদেরকে প্রলুদ্ধ করে প্রতারণার অংশগ্রহণ করানো।
  • গোপন ভোটদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা।
  • ভোটকেন্দ্রে সন্তাস এবং বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করে ভোটারদের ভোটদানে বাধাদান করা।
  • দিনের শেষার্ধে অব্যবহৃত ব্যালট কাজে লাগিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা।
  • কোনো পক্ষ কর্তৃক ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার চেষ্টা করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধা সৃষ্টি করা।
  • কোনো পক্ষ কর্তৃক জাল ভোট দেয়ার উদ্দেশ্যে ভোটকক্ষে জটলার সৃষ্টি করা।

ভোট গ্রহণের পর যা অনিয়ম হয়:

  • ভোট গণনার সময় ব্যালট পেপার ভুল পড়া অর্থাৎ ব্যালট পেপারে যে প্রতীকের সীল আছে তা উল্লেখ না করে অন্য প্রতীক উল্লেখ করা।
  • গণনার সময় কোনো প্রার্থীর এজেন্টকে অথবা নির্বাচন পর্যবেক্ষককে বের করে দেওয়া বা উপস্থিত থাকতে বাধা দেওয়া
  • টালিশীটে ভুল তথ্য তুলে রাখা।
  • প্রকৃত জনগণের কাছে অবিশ্বাস্য করে তোলার জন্য গণনা শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রচার করা।
  • গণমাধ্যমে ভুল ফলাফল সিট দেওয়া বা ভুল/মিথ্যা ফলাফল প্রচার করা।
  • রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেওয়া।
  • ফলাফল সীট তৈরি করে তড়িঘড়ি নির্বাচনী সামগ্রী নষ্ট করে ফেলা।
  • ভোটকেন্দ্র থেকে রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে যাওয়ার পথে ব্যালট বাক্স ও অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী চুরি বা ছিনতাই করা।

পর্যবেক্ষকদের করনীয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা 2024 পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে একজন পর্যবেক্ষকদের অনেক করণীয় রয়েছে। যেমন:

ভোটের দিন পূর্বে

নির্বাচনের এক বা দুই সপ্তাহ পূর্বে সংশ্লিষ্ট সংগঠন নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্যে একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। পর্যবেক্ষকদের কাজের সুবিধার জন্যে এই পুস্তিকাটি তাদের নিকট বিতরণ করা বাঞ্ছনীয়।

প্রশিক্ষণের প্রারম্ভে পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব সম্পর্কিত বিষয়াদি আলোচিত হওয়া প্রয়োজন। ঐ সময়ে ব্যবহারিক নীতিমালার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।

রিপোর্ট ফরমসমূহ সম্পর্কে পুষ্পানুপুঙ্খরূপে আলোচনা করতে হবে যাতে অংশগ্রহণকারীগণ সেগুলো সঠিকভাবে পূরণ করার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে পারে। মনে রাখবেন এই ম্যানুয়েলে ২ টি করে পর্যবেক্ষণ ফরম ও ভোট গণনার ফরম সংযুক্ত আছে। একটি করে ফরম আপনার নিজের সংগঠনের জন্য ও একটি করে ফরম UCC EMWG নেটওয়ার্ক অফিসে পাঠাবেন। যদি সময় থাকে, তাহলে নির্বাচন এবং ভোট গণনার কৃত্রিম মহড়ার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে। সেই সময় পর্যবেক্ষকগণকে নির্বাচন কর্মী হিসেবে অনুশীলন করতে দেয়া যাবে। এর ফলে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের ধারণা আরও স্পষ্ট হবে। সবশেষে, নির্বাচন সমাপ্তির পর ফলাফল ঘোষণার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে হবে।

নির্বাচনের পূর্বেই পর্যবেক্ষকদের নিকট নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পরিচয়পত্র অবশ্যই প্রদান করতে হবে। এ কথাও তাদের পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে যে, নির্বাচনের পর মনিটরিং ফরম কোথায় জমা দিতে হবে।

নিরাপত্তা

আপনার নিরাপত্তা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কারণে যদি আপনি মনে করেন যে কোনো বিশেষ এলাকায় পর্যবেক্ষণের কাজটি নিরাপদ নয়, তবে সেখানে যাওয়া উচিত হবে না। বিষয়টি আপনার পর্যবেক্ষণ ফরমে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করুন। এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর ফলে পরিষ্কার উপলব্ধি হবে যে, পরিবেশ সুষ্ঠ এবং অবাধ নির্বাচনের অনুকূল নয়। ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে আপনার অবস্থানকালে যদি কোনো সহিংস ঘটনা ঘটে অথবা সে ধরনের ঘটনার হুমকি দেখা দেয় তাহলে শান্ত থাকুন এবং যথাশীঘ্র সম্ভব সেই স্থান পরিত্যাগ করুন। সেখানে ফিরে যাবেন না।

মনে রাখবেন, কোনো সহিংসতা বা সহিংস ঘটনার ইঙ্গিত পেলে ভোটারগণ নির্বাচন কেন্দ্রে যাওয়া হতে বিরত থাকতে পারেন এবং যে কেন্দ্রে এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হবে, তার ফলাফল বাতিল হয়ে যেতে পারে।

নির্বাচন কেন্দ্র ও নির্বাচন কর্মকর্তা

প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারগণ এবং পোলিং অফিসারবৃন্দ রিটার্নিং অফিসার দ্বারা মনোনীত হয়ে থাকেন। প্রধানত তারা সরকারী প্রতিষ্ঠান হতেই মনোনীত হয়ে থাকেন। তবে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ হতেও মনোনীত হতে পারেন, কিন্তু কেউ যদি কোনো নির্বাচনী প্রার্থীর হয়ে কখনও কাজ করে থাকে তবে সে ব্যক্তিকে কোনো ভোটকেন্দ্রে নিয়োগ দেয়া যাবে না।

ভোটাররা সহজেই পৌঁছতে পারেন এমন এলাকায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন বাঞ্ছনীয়। যে দালান অথবা স্থানে ভোটকেন্দ্র স্থাপিত হবে তা যথেষ্ট বড় হওয়া প্রয়োজন ভোটারগণ গোপনীয়তা রক্ষা করে নিরপেক্ষভাবে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন। কোনো প্রার্থীর মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণাধীন ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে না। ভোটকেন্দ্রের বাইরে সকল প্রার্থীর নাম ও নির্বাচনী প্রতীকের তালিকা টানানো থাকবে।

বুথ ও এজেন্ট

যদি একটি ভোটকেন্দ্রে কেবল একটিই বুথ থাকে, তবে সেই কেন্দ্রের জন্যে একজন প্রার্থী বা তার মনোনীত এজেন্ট সর্বোচ্চ দুইজন পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেন। যদি কোনো ভোট কেন্দ্রে একাধিক বুথ থাকে, তবে কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট প্রতিটি বুথের জন্যে একজন করে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারবেন।

তবে এ নিয়োগের বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে পূর্বেই জানাতে হবে।

ভোটকেন্দ্র চালু হওয়ার পূর্বে

নির্বাচন কেন্দ্র চালু হওয়ার অন্তত দেড় ঘণ্টা পূর্বে প্রিজাইডিং অফিসার নিম্নোক্ত বিষয় লক্ষ করবেন:

যে ব্যালট বাক্সগুলি ব্যবহার করা হবে তা পুরোপুরি খালি কি না তা নিশ্চিত করা।

খালি ব্যালট বাক্সগুলি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিকট পৌঁছানো হবে এবং বিনিময়ে প্রতিটি প্রাপ্ত ব্যালট বাক্সের ক্রমিক সংখ্যা উল্লেখপূর্বক রশিদে স্বাক্ষর গ্রহণ করতে হবে। চাইলে পোলিং এজেন্টও প্রাপ্তি ফরম স্বাক্ষর করতে পারেন।

উপস্থিত পোলিং এজেন্ট বা পর্যবেক্ষকদেরকে দেখানোর পর শূন্য ব্যালট বাক্সগুলো বন্ধ করে সীলমোহর লাগানো হবে।

বাক্সগুলো এমন স্থানে রাখা হবে যেখানে পোলিং এজেন্ট ও পর্যবেক্ষকগণ নজর রাখতে পারেন এবং ভোটাররা সহজেই ব্যালট পেপার ব্যবহার করতে পারেন।

কোনো নির্বাচনী বুথে এককালীন কেবল একটি ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা যাবে। নির্বাচন কালে যদি একটি ব্যালটবাক্স পূর্ণ হয়ে যায় তবে প্রিজাইডিং অফিসার সীলমোহর করে একটি নিরাপদ স্থানে বাক্সটি রাখবেন (তবে সেটিকে পর্যবেক্ষক অথবা নির্বাচনী এজেন্টদের দৃষ্টির আওতায় রাখতে হবে)। অতঃপর অপর একটি খালি ব্যালট বাক্স প্রতিস্থাপিত হবে।

ভোটারগণ যাতে গোপনীয়তা বজায় রেখে তাঁদের ব্যালট চিহ্নিত ও ভাঁজ করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যে বুথ অথবা পর্দাটি যথোপযুক্তভাবে স্থাপন করার বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসার ব্যবস্থা নেবেন ।

ভোট গ্রহণ চলাকালীন

সকাল ৮ টায় নির্বাচন আরম্ভ হবে। ভোটারগণ কেন্দ্রে প্রবেশের পর তাঁদের আঙ্গুলে কালির চিহ্ন আছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে। যদি কোনো কালি পরিলক্ষিত হয় তবে ভোটদাতাকে তার ব্যালট প্রদান করতে দেয়া যাবে না এবং বুথ ত্যাগ করতে বলা হবে। যদি কোনো ভোটার আঙ্গুলে কালির চিহ্ন গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় তবে তাকে ভোট প্রদান করতে দেয়া হবে না এবং বুথ ত্যাগ করতে বাধ্য করানো হবে।

আঙ্গুলের কালির চিহ্ন প্রদানের পর একজন ভোটদাতা পরবর্তী কর্মকর্তার সম্মুখে অগ্রসর হবেন, যিনি ভোটদাতার ক্রমিক সংখ্যা ও নাম ভোটার তালিকায় চিহ্নিত করবেন। নাম তালিকায় থাকলে কর্মকর্তাটি উচ্চস্বরে ভোটদাতার নাম ও ক্রমিক সংখ্যা উল্লেখ করবেন এবং ভোটার তালিকায় সেই ভোট দাতার নামের পাশে চিহ্ন প্রদান করবেন যার দ্বারা ব্যালট পেপার ইস্যুকরণের বিষয় নিষ্পত্তি হবে। অতঃপর একজন কর্মকর্তা ব্যালটবই হতে ব্যালট পেপারটি ছিঁড়ে তার পেছনে সরকারী সীল দিয়ে ভোটদাতার কাছে ব্যালট হস্তান্তর করবেন। কর্মকর্তাটি তখন ভোটারের তালিকাভূক্ত ক্রমিক নম্বরটি মূড়িপত্রে (কাউন্টার ফয়েল) লিখে নেবেন (মুড়িপত্র হল মূলবই হতে ব্যালটপত্র ছিঁড়বার পর যে অংশটি অবশিষ্ট থাকে)। অতঃপর ভোটার মুড়িপত্রে স্বাক্ষর দান করবেন অথবা স্বাক্ষরজ্ঞানহীন ভোটার আঙ্গুলের ছাপ দেবেন।

ব্যালট প্রাপ্তির পর একজন ভোটদাতা বুধে প্রবেশ করে পছন্দনীয় প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের পাশে চিহ্ন দেবেন (একটি ব্যালটে অপর প্রার্থীদের নাম এবং প্রতীকও থাকবে তবে ভোটদাতা কেবল তার পছন্দের প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের পাশেই চিহ্ন প্রদান করতে পারবেন)। অতঃপর এমন ভাবে ব্যালটপত্রটি ভাঁজ করবেন যাতে পেছন দিকের সরকারী সীলমোহরটি দেখা যায়। কোনো নির্বাচনী কর্মকর্তা বা পোলিং এজেন্ট অনুরোধ করলে একজন ভোটার ভোট বাক্সে প্রদানের পূর্বে তাঁর ব্যালটটিতে দেয়া সরকারী সীলমোহর প্রদর্শন করবেন। ভোট প্রদানের পর অনতিবিলম্বে ভোটদাতা কেন্দ্ৰ ছেড়ে যাবেন।

যদি কোনো ভোটার অন্ধ বা পঙ্গু হন এবং কোনো সহায়তা ছাড়া তার পক্ষে ভোট প্রদান সম্ভব না হয়, তবে প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারকে সহযোগিতা করার জন্যে একজন সঙ্গীকে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করবেন।

যদি কোনো ভোট দাতা একটি ব্যালট পেপার নষ্ট করে ফেলেন তবে তিনি অপর একটির জন্যে অনুরোধ জানাতে পারেন। এমতাবস্থায় প্রিজাইডিং অফিসার বিনষ্ট ব্যালটটি ও তার মূড়িপত্র বাতিল করে বিনষ্ট ব্যালট পেপার’ চিহ্নিত প্যাকেটে তা সংরক্ষণ করবেন ।

ভোটকেন্দ্রসমূহ বিকেল ৪ টায় বন্ধ হবে। যদি কোনো ভোটার বিকেল ৪টার সময়েও লাইনে বা সারিবন্দী হয়ে থাকেন তবে তাঁকেও ভোট প্রদান করতে দেওয়া হবে; কিন্তু বিকেল ৪টার পর নতুন করে কাউকে লাইনে দাড়াঁতে দেয়া হবে না।

টেন্ডার্ড এবং আপত্তিকৃত ব্যালটসমূহ

যদি কোনো ভোটদাতা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান যে, অন্য কেউ তার ভোট প্রদান করেছেন তবে তিনি টেন্ডার্ড ব্যালট দাখিলের অধিকার প্রাপ্ত হবেন। তাঁর নাম এবং নম্বর একটি (বিশেষ) ব্যালট তালিকায় লিপিবন্ধ করা হবে। তাঁর ব্যালট পেপার নাম ও নম্বরসহ পৃথক একটি প্যাকেটে রক্ষিত হবে এবং সে ক্ষেত্রে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে তিনি ভোট দান করতে ইচ্ছুক তাও লিপিবদ্ধ করা হবে।

একজন নির্বাচন প্রার্থী অথবা পোলিং এজেন্ট যদি মনে করেন কোনো ব্যক্তি ইতোমধ্যেই ভোট প্রদান করেছেন অথবা অপর কোনো ব্যক্তি সেজে ভোট নিতে চেষ্টা করছেন তবে তিনি সেই ভোটারের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করতে পারবেন এবং এমতাবস্থায় প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে নগদ ২ (দুই) টাকা মাত্র গচ্ছিত রাখতে হবে। যদি একাধিকবার ভোট প্রদানের বিধিগত গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত হবার পরও আপত্তিকৃত ভোটার ভোট দিতে ইচ্ছুক থাকেন তবে প্রিজাইডিং অফিসার তাঁকে একটি ব্যালট পেপার প্রদান করবেন যার কাউন্টার ফয়েলে (মুড়ি পত্রে) উক্ত ব্যক্তির স্বাক্ষর অথবা আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণ করা হবে। প্রিজাইডিং অফিসার সেই ভোটারের নাম ও ঠিকানা আপত্তিকৃত ভোটের তালিকাভুক্তির পর একটি বিশেষ প্যাকেটে ব্যালটটি রাখবেন যার গায়ে আপত্তিকৃত ব্যালট হিসাবে চিহ্নিতকরণ হবে।

ভোট গণনার সময়

ভোট গণনা

সর্বশেষ ভোটার ভোটদানের পর কেন্দ্র ত্যাগ করার সাথে সাথেই প্রিজাইডিং অফিসার পোলিং এজেন্ট এবং নিবন্ধীকৃত পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে ভোট গণনার কাজে হাত দেবেন।

ভোট কেন্দ্রে সকল বুধ হতে পাওয়া ব্যালট বাক্সগুলো খোলা হবে এবং ব্যালট গণনার
পর তাদের সংখ্যা রেকর্ড করা হবে। আপত্তিকৃত ব্যালটগুলোকেও গণনা করা হবে এবং তাদের সংখ্যা রেকর্ড করা হবে। অতঃপর ব্যালট পেপারগুলো খুলে মনোনীত প্রার্থীদের ক্রমানুসারে পৃথকভাবে সাজানোর পর প্রত্যেক প্রার্থীর প্রাপ্ত সর্বমোট ভোট সংখ্যা রেকর্ড করা হবে।

ভোটার কর্তৃক ব্যালট পেপারে নির্বাচন প্রার্থীর নাম এবং প্রতীকের পাশে নির্দিষ্ট জায়গা পূর্ণ অথবা অর্ধেকের চাইতে বেশী স্থান জুড়ে চিহ্ন বসানো হলেই একটি ব্যালট ‘বৈধ’ বলে বিবেচিত হবে।

নিম্নলিখিত কারণে ব্যালট পেপার গণনার অযোগ্য হতে পারে।

  • • কোনো সরকারী সীলমোহর না থাকলে
  • • সরকারী চিহ্ন অথবা অনুমোদিত চিহ্ন ব্যতীত অপর কোনো লেখা বা চিহ্ন থাকলে অথবা ব্যালটের সঙ্গে কোনো বস্তু বা কাগজ সংযোজিত হলে
  • কোনো প্রার্থীর পক্ষে ব্যালটে কোনো সীল না থাকলে;
  • একাধিক সীল, দুই প্রার্থীর মধ্যবর্তী স্থানে সীল অথবা এমন কোনো স্থানে সীল যাতে বোঝা যায় না ভোটদাতা কাকে ভোট দিতে চেয়েছিলেন;
  • “টেন্ডারড’ ব্যালট পেপার ।
  • প্রিজাইডিং অফিসার নিজস্ব অভিমতানুসারে অথবা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাঁর পোলিং এজেন্ট কর্তৃক উপস্থাপিত অনুরোধ যথার্থ বলে বিবেচিত করলে ভোট পুনর্গণনা করতে পারেন।

পর্যবেক্ষকগণ লক্ষ করুন

যখন প্রতিটি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা, টেন্ডার্ডকৃত ব্যালট, আপত্তিকৃত ব্যালট এবং নষ্ট ব্যালটের সংখ্যা ঘোষিত হবে তা এই পুস্তিকায় সংযোজিত ২ টি ভোট গণনা ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে রেকর্ড করে রাখবেন।

ফলাফল সীট

গণনার পর প্রিজাইডিং অফিসার একটি গণনা প্রতিবেদন ফরম পূরণ করবেন। এই তালিকায় থাকবে প্রতিটি প্রার্থীর প্রাপ্ত বৈধ ভোট সংখ্যা এবং গণনায় অন্তর্ভূক্ত করা যায় নাই এমন ব্যালট সংখ্যা। এছাড়াও প্রিজাইডিং অফিসার ‘ব্যালট পেপার হিসাব ফরম’ পূরণ করবেন যেখানে তালিকাভূক্ত থাকবে প্রাপ্ত ব্যালট সংখ্যা, আপত্তিকৃত ব্যালটের সংখ্যা, অবিলিকৃত ব্যালট সংখ্যা এবং কত সংখ্যক ব্যালট পেপার বিনষ্ট হয়েছে তার সংখ্যা। নির্বাচন এজেন্টগণ প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক পূরণকৃত ফরমসমূহের সার্টিফায়েড (সত্যায়িত) অনুলিপির জন্যে অনুরোধ জানাতে পারবেন ।

ফরমগুলো পূরণের পর সঠিক ব্যালট পেপারসমূহ প্রত্যেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জন্য পৃথক প্যাকেটে সংরক্ষিত হবে, সেই সঙ্গে প্রার্থীর নাম ও প্রতীক উল্ল্যেখপূর্বক প্রতিটি প্যাকেটে কতটা ব্যালট রাখা আছে তা লিপিবদ্ধ করা হবে। বাতিল ব্যালটসমূহ পৃথক প্যাকেটে রাখা হবে। প্রত্যেকটি পৃথক ব্যালট প্যাকেট এবং সেই সঙ্গে বাতিল ব্যালটের প্যাকেটগুলো সহ একটি বৃহত্তর প্যাকেটে সংরক্ষিত করবার পর প্রিজাইডিং অফিসার সীলমোহর দ্বারা বন্ধ করবেন।

নিম্নবর্ণিত দ্রব্যাদিও প্রিজাইডিং অফিসার ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেটে রাখবেন :

  • • যে সকল ব্যালট পেপার ইস্যু করা হয়নি;
  • বিনষ্ট ব্যালট পেপার;
  • • নির্বাচনী তালিকার চিহ্নিত কপিসমূহঃ
  • • ব্যবহৃত ব্যালট পেপারের কাউন্টার ফয়েল (মূড়িপত্র);
  • • টেন্ডার্ডকৃত ভোট তালিকা,
  • ব্যালট বাক্স ইস্যুর ফরমসমূহ যেখানে কতগুলো ব্যালট বাক্স ইস্যুকৃত ও ব্যবহৃত হয়েছে তা প্রদর্শিত থাকবে;
  • • আপত্তিকৃত ভোটের তালিকা:

অন্যান্য সকল কাগজাদি, যা সংরক্ষণের জন্যে রিটার্নিং অফিসার নির্দেশ প্রদান করেছেন।

ফলাফল সমন্বয়

ভোটকেন্দ্র হতে প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক ভোট গণনা এবং ব্যালট পেপারের হিসাব শেষ হবার পর উপস্থিত পর্যবেক্ষকগণকে দু’টি করে ভোটকেন্দ্র গণনা করম এবং পর্যবেক্ষণ ফরম পূরণ করতে হবে। যথাশীঘ্র সম্ভব একটি ভোটকেন্দ্র গণনা ফরম এবং একটি পর্যবেক্ষণ ফরম ইউনিয়ন সমন্বয়কারী কমিটির নিকট প্রেরণ করতে হবে। কোনো একটি ভোটকেন্দ্রে যদি একাধিক দল নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক উপস্থিত থাকেন তবে ফরম পৌঁছানোর দায়িত্ব দলের পক্ষে একজনকে মনোনীত করা যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হবে যদি রিপোর্টসমূহ একইদিনে পৌঁছানো সম্ভব হয়। কিন্তু একান্ত সব না হলে সেগুলো পরের দিন সকালে অবশ্যই পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সকল ফরমে একটি করে কপি (সংগঠন কপি)- পর্যবেক্ষকরা তাদের কাছে রেখে দেবেন, এবং তাদের নিজস্ব সংগঠনে জমা দেবেন।

ইউনিয়ন হতে

ইউনিয়ন সমন্বয়ক কমিটিতে একদল স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন যারা পর্যবেক্ষকদের রিপোর্টসমূহ গ্রহণ ও সমষ্টিকরণ করবেন। সকল রিপোর্টসমূহ প্রাপ্তি এবং যোগ করার পর ফলাফল আলাদাভাবে প্রণীত ইউনিয়ন রিপোর্ট ফরমগুলোতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। ইউনিয়নসমূহের রিপোর্টগুলো যথাশীঘ্র সম্ভব নির্বাচনী এলাকা সমন্বয়ক কমিটির নিকট পাঠাতে হবে এবং সেখানে নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক যোগফল প্রস্তুত করা হবে। ইউনিয়নসমূহের রিপোর্টের অনুলিপিসমূহ কমিটির প্রতি সদস্যকে প্রদান করা হবে যা সংগঠনের সদর দপ্তরে হস্তান্তরিত হবে। যতক্ষণ না সরকারি ফলাফল ঘোষণার পর অনিম্পন্ন অভিযোগসমূহ অথবা মামলা সংক্রান্ত বিষয়াদির সমাধান ঘটবে ততদিন সেই সকল পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও ভোট গণনা ফরমসমূহ সংরক্ষিত রাখা হবে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক যা করা উচিত নয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা 2024 এ উল্লেখ রয়েছ্ব একজ নির্বাচন পর্যবেক্ষক যা করতে পারবেনা।

  • নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সাথে বা অন্য কোনো পর্যবেক্ষক বা ভোটারদের সাথে এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে, তবে কোনো আপত্তির সম্মুখীন হলে সে বিষয়ে নির্বাচন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে পারেন।
  • ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে একজন ভোটারের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করবেন না।
  • ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করবেন না।
  • মনগড়া এবং জনশ্রুতিতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রিপোর্ট করবেন না।
  • পর্যবেক্ষক বিবদমান পরিস্থিতিতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করবেন না।
  • পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখবেন কিন্তু কখনই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা
    করবেন না। কারণ তাতে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • পর্যবেক্ষক কখনই নির্বাচনী বিরোধে জড়িয়ে পড়বেন না।
  • নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে প্রশাসনের বা কোনো রাজনৈতিক দলের বা কোনো প্রার্থীর পক্ষাবলম্বন করবেন না। কোনো প্রার্থীর এজেন্টদের সাথে অতিরিক্ত বন্ধুত্ব / সম্পর্ক তৈরী করবেন না।
  • গোপন করে ভোটারদের ভোটদানের সময় প্রবেশ করবেন না।
  • ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলাকালে বিনা প্রয়োজনে কথা বলবেন না।
  • ভোট প্রদানের জন্যে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি নাড়াচাড়া করবেন না।
  • ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসারদের বিরক্তির কারণ ঘটাবেন না।

পর্যবেক্ষণ ফরম ও টালিশীট পূরণের প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা

ভোটার তালিকা সম্পর্কে অভিযোগ

এমন ব্যক্তি যিনি ভোটার হওয়ার যোগ্য এবং ঐ এলাকায় বসবাস করেন কিন্তু তালিকায় নাম নেই।

ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে অথচ ভোটার হওয়ার যোগ্য নন।

ভোট তালিকায় নাম রয়েছে অথচ ঐ এলাকার বাসিন্দা নন এমন ব্যক্তি উপরোক্ত বিষয় সম্পর্কে যে সব অভিযোগসমূহ ভোটার তালিকা সম্পর্কিত অভিযোগ হিসেবে গণ্য হবে।

ভোটগ্রহণ পদ্ধতি/ আইন

প্রিজাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার প্রথমে ভোটারের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন। পরিচয় নিশ্চিত হলে নাম ও ক্রমিক সংখ্যা ধরে ডাকা হয় যাতে পোলিং এজেন্টগণ শুনতে পান।

ভোটারের বৃদ্ধাঙ্গুলে বা অন্য কোনো আঙ্গুলে অমোচনীয় কালির চিহ্ন না থাকলে, আঙ্গুলে অমোচনীয় কালির চিহ্ন দিয়ে তাকে ব্যালট পেপার দেয়া হয়।

ভোটার ক্রমিক নং মুড়ি বইয়ে লিখে রাখা হয় এবং সেখানে ভোটারের স্বাক্ষর/টিপসই রাখা হয়।

ভোটার ব্যালট পেপার ও কালি লাগানো একটি সীলমোহর নিয়ে গোপন স্থানে/ কক্ষে পছন্দের প্রার্থীর প্রতীক চিহ্ন সম্বলিত নির্দিষ্ট স্থানে সীলমোহরের ছাপ দেবেন।

ভোটার নিয়ম মাফিক ব্যালট পেপার ভাঁজ করে পোলিং অফিসার ও এজেন্টদের সম্মুখে রক্ষিত বাক্সে ব্যালট পেপারটি ফেলবেন।

জালভোট

• জীবিত, মৃত অথবা কল্পিত বাক্তির নামে যদি কেউ ভোট দেয় তাহলে তাকে জাল ভোট বলে।

অন্যের ভোট দিতে এসে ধৃত ব্যক্তি ।

তালিকায় অন্তর্ভূক্ত এমন ভোটার যারা ভোট দিতে এসে ভোট আগেই প্রদান হয়েছে জানতে পেরেছেন এমন ভোটের সংখ্যা ।

ভোটকেন্দ্রের নির্বাচনী কর্মকর্তা

• প্রিজাইডিং অফিসার- (১ জন) যিনি সার্বিকভাবে কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন।

• সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার- (১ জন) প্রিজাইডিং অফিসারকে সহযোগিতা করেন এবং তার অনুপস্থিতিতে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।

• পোলিং অফিসার (১০ জন ও অতিরিক্ত পোলিং অফিসার- ১ জন) প্রিজাইডিং অফিসার এবং সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের কাজে সহযোগিতা করেন এবং বুথের দায়িত্বে থাকেন।

নিরাপত্তা বাহিনী

নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন বলতে কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সামরিক বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ ও আনসারদের বোঝায় ।

ভোট কেন্দ্রে অননুমোদিত/অবাঞ্ছিত ব্যক্তি

নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ ছাড়া অন্য যে কেউ অননুমোদিত/অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হবেন ।

• নির্বাচন কাজে নিয়োজিত যে-কোন ব্যক্তি।

কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট এবং পোলিং এজেন্ট।

নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃত সাংবাদিক, দেশী ও বিদেশী পর্যবেক্ষক।

রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক বিশেষভাবে অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

টেন্ডার্ড ভোট

কোনো ব্যক্তি ভোট দিতে এসে যদি দেখেন তার নাম ব্যবহার করে অন্য কেউ তার ভোটটি দিয়ে গেছেন। এমন ঘটলে তিনি ভোটদানের জন্য একটি ব্যালট পাবেন এই ব্যালটের মাধ্যমে তিনি যে ভোট দিবেন তা-ই টেন্ডার্ড ভোট নামে পরিচিতি।

টেন্ডার্ড ভোট বাক্সে ফেলা যায় না। এরূপ ভোটের ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসার ভোটদাতার নাম ও ক্রমিক সংখ্যা ব্যালটে লিখে নির্দিষ্ট খামে রাখবেন।

আপত্তিকৃত ভোট

কোনো ভোটার ভোট দিতে চাইলে কোনো প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্ট প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে যদি অভিযোগ করেন যে, তিনি একই ভোটকেন্দ্রে বা অন্য কোন কেন্দ্রে ভোটদান করেছেন বা যে নামে তিনি ভোট দিতে চান তিনি ঐ ব্যক্তি নন যদি এরূপ অভিযোগের পেছনে যুক্তিসংগত কারণ থাকে এবং অভিযোগকারী আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাহলে এরূপ ভোটারকে জাল ভোট প্রদানের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার একটি ব্যালট পেপার দেবেন। এহেন ব্যালট পেপারকে আপত্তিকৃত ব্যালট বলে। এ রকম ব্যালট চিহ্নিত করার পর বাক্সে না ফেলে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে দিতে হয় ।

বিনষ্ট ব্যালট পেপার

অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ভোটার তার অনুকূলে ইস্যুকৃত ব্যালট পেপার যদি এমনভাবে নষ্ট করে ফেলেন যে, তা বৈধ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না এবং এ ব্যাপারে প্রিজাইডিং অফিসারের নিকট সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারলে তাকে আর একটি ব্যালট পেপার দেয়া হবে। নষ্ট ব্যালট পেপারটি প্রিজাইডিং অফিসার দস্তখত করে বাতিল করবেন।

পর্যবেক্ষকের প্রয়োজনীয় উপকরণ

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা ;

  • ২ কপি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ফরম ও ২ কপি ভোট গণনা ফরম;
  • সংগঠনের পরিচয়পত্র;
  • নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত অনুমোদন পত্র;
  • কলম, পেন্সিল ও রাবার;
  • কাগজ/নোট বুক;
  • ক্লিপ বোর্ড (সম্ভব হলে);
  • মোমবাতি, দিয়াশলাই টর্চ লাইট;
  • ক্যামেরা ফিল্মসহ (সম্ভব হলে);
  • খাবার ও পানি।

শেষকথা:

প্রিয় পাঠক, এই পোস্টে আমি একনজরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নির্দেশিকা 2024 সংক্রান্ত যাবতীয় তুলে ধরেছি। এতে কোনোভ্রান্তি হলে কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ

Visited 462 times, 1 visit(s) today

Leave a Comment

You cannot copy content of this page